[Poem][newsticker]
September 2020



জামাল উদ্দীন||

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বেড়ে যায়। মন্দাক্রান্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই মার্কিন নাগরিকদের একটি অংশ কাজ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কর্মসংস্থানের ইস্যুটি বড় হয়ে দেখা দেয়। প্রার্থীরাও বেকারত্ব নিরসন ও কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টিই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর্থিক নীতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান যোগাতে তিনি সক্ষম হয়েছেন এমনটি বলা যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ফেব্রæয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৩৬ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। জানুয়ারিতে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সেখানে ফেব্রæয়ারিতে বেকারত্বের হার কমে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাৎ বেকারত্ব কমেছে দশমিক ২ শতাংশ।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের পর বেকারত্বের এই হার সবচেয়ে কম। জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৫৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে এক মাসের ব্যবধানে ২ লাখ ৩৬ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি বেশ ইতিবাচক। বিবিসির খবর অনুযায়ী, গত মাসে পেশাগত ও ব্যবসা খাতে যোগ হয়েছে ৭৩ হাজার কর্মসংস্থান। নির্মাণ শিল্পে নিয়োগ পেয়েছেন ৪৮ হাজার কর্মচারী। ¯^াস্থ্য খাতে সংযোজিত হয়েছে ৩২ হাজার ও খুচরা বিক্রি খাতে ২৪ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ঘরে বসেই আমরা সুদুর আমেরিকার কর্মসংস্থানের তথ্য জানতে পারছি। কিন্তুু আমাদের দেশে মাসে কি পরিমান কর্মসংস্থান হচ্ছে, তা কি জানতে পারছি? মাসে নয়, বছরে এমনকি একটি সরকারের মেয়াদকালে কি পরিমান কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, সে তথ্যও সঠিকভাবে আমরা পাই না। এমনকি বিষয়টি আমাদের জাতীয় গুরুত্ব থেকেও যেন পিছিয়ে। বিভিন্ন দেশের বাজেট ঘোষণার সময় কর্মসংস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দীর্ঘদিনই এ বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল। স¤প্রতি বাজেট বক্তৃতায় কর্মসৃজনে কিছু প্রকল্পের কথা বলা হয় মাত্র। কিন্তুু প্রকৃত অর্থে কি পরিমান কর্মসংস্থান হবে, কিংবা আগের বছর হয়েছে তা উঠে আসে না। অথচ আমাদের রাজনীতিকেরা ভাত-কাপড়ের কথা বলে মুখে খই ফোটান। কিন্তু বাইরের দেশের অবস্থা কি? সেসব দেশে বেকারত্ব নিরসনের বিষয়টি উঠে আসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসাবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিষয়টি পুনর্বার উল্লেখ করতে চাই।

আমরা যদি মার্কিন নির্বাচনে বারাক ওবামা কিংবা মিট রমনির বক্তৃতাগুলো ফিরে দেখি তাহলে দেখবো কতবার তারা কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন। অর্থনীতিই এই নির্বাচনে মূখ্য ছিল। কেবল কাজ আর কাজের কথাই উঠে এসেছে দুই প্রার্থীর মুখে। সম্ভবত এ কারণেই যে, মানুষকে কাজের সুযোগ দিয়ে আয়ের পথ সুগম করে দিতে হবে। বেকারত্ব লাঘব করলে ওসব শ্রমঘন্টা অর্থনীতিকে উন্নত প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। বিশ্বমন্দার পর মার্কিন অর্থনীতিতে যেভাবে ধস নেমেছিল, তাতে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া ছিল বারাক ওবামার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু শেষদিকে এসে অর্থনীতি কিছুটা গতি পায়। নির্বাচনের ঠিক আগে, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসেই ১ লাখ ৭১ হাজার কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। যা বেকারত্বের সূচককে যেমন নিম্নমুখী করেছিল, তেমনি ওবামার জন্যও আশির্বাদ হিসাবে কাজ করে। নির্বাচনের আগে এমন একটি খবরকে পুঁজি করে ভোট প্রার্থনা করতে পেরেছেন ওবামা। 

বিশ্বের এই ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট নিয়ে যত মাতামাতি। মার্কিন মুলুকের মত আমাদের দেশেও মূলত দুটি দল (বলছি প্রধান দুটি দলেরই সিংহভাগ জনসমর্থনের কথা) রয়েছে। সে কারণেই হয়তো আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলতে বলতেই রিপাবলিকান না ডেমোক্রেট এই আলোচনার ব্যাপ্তি ঘটেছে। সেই সঙ্গে মার্কিন নির্বাচনী হাওয়া আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে নানান ভাবনার খোরাক যুগিয়েছিল। নির্বাচন হবে কি না, কিংবা তত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভারত সফর, রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস দিয়েছিল। ¶ুদ্র দলগুলোর একতাবদ্ধ হয়ে জোটগঠনের উদ্যোগও মনে করিয়ে দিচ্ছিল নির্বাচনের সময় এসে গেছে। 

গনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে এমনটিই ¯^াভাবিক। অতীতেও হয়েছে। কখনো ¯^াভাবিকভাবে, কখনো বা সংঘাতের পর সরকারী পক্ষ নির্বচানের দাবি মেনেছে। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের আর দেখার কিছু বাকি নেই সাধারণ মানুষের। অতীতে দেখেছে, এখনো দেখছে। একই ট্র্যাডিশন কতদিন আর ভাল্লাগে। তাই মানুষ চায় রক্তপাতহীন সরকার বদল। কিন্তুু চাইলেই কি হবে? উত্তর হতে পারে- হবে না কেন? জনগনইতো সকল ক্ষমতার উৎস। তাহলে জনগণ যা চাইবে, তাইতো হওয়ার কথা। কিন্তুু বাস্তবে কি তা হয়েছে? ধরে নিই, জনগণ চায় দুবেলা খেয়েপরে বাঁচতে। তার জন্য কাজ দরকার। বছরে বিশ লাখ যুবক কর্মসংস্থান বাজারে আসছে। কিন্তুু কাজ মিলছে না। বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, প্রতিটি পরিবারের একজন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে। সে লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। বড় বিষয় হলো দেশে কি পরিমাণ লোক বেকার কিংবা কত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে সে পরিসংখ্যানইতো সঠিকভাবে সরকারের কাছে নেই। তবু ভাল যে, কর্মসংস্থানের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে যোগ হয়েছে। তবে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে সঠিক তথ্য থাকা চাই। তবেই না সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় লক্ষ্য স্থির করেই কেবল কাক্সি¶ত উন্নয়ন করা সম্ভব। অথচ কর্মসংস্থানের মতো আরও অনেক তথ্য পেতেই নীতি নির্ধারকদেরকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগের তথ্য, আয়-ব্যয়ের তথ্য, প্রকৃত জনসংখ্যা এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। এ তথ্যগুলো ¯^ল্প সময়ের ব্যবধানে পাওয়া গেলে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু তা না থাকায় সরকার দেশের জনসংখ্যার আকার এক রকম ভেবে সে হিসেবে খাদ্য মজুদ বা অন্য সব পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিন্তু পরে দেখা যায় খাদ্য আমদানি হয় বেশি হয়েছে নতুবা রফতানি না করায় আবাদকৃত ফসল পানির দরে ছাড়তে হচ্ছে। আর এ ধরনের ঘটনা ঘুরে ঘুরেই ঘটছে। ফলে কৃষকরা আবাদে অনুৎসাহিত হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য সরকারের কাছে সব ধরনের সঠিক তথ্য ¯^ল্প সময়ের মধ্যেই থাকতে হবে। উন্নত বিশ্বে সঠিক তথ্যের প্রয়োগ ও ফলাফল খুব ভালোভাবে দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বছর অন্তে পাওয়া যায়, তাও কতটা সঠিক তা নিয়েও প্রশ্ন থাকে। ফলে গোড়ায় গলদ থাকলে যা হওয়ার তা-ই হয়। সরকার যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে নীতি গ্রহণ করে পরবর্তীতে দেখা যায় প্রকৃত তথ্য সেটি নয়। ফলে পরিকল্পনাটিও সঠিক হয়না। আর কর্মসংস্থান নিয়ে দেখা যায়, সরকার কিংবা বিরোধী দল ঢালাওভাবে নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। সরকার বলেন, ভুরি ভুরি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, দরিদ্রতা জাদুঘরে চলে যাচ্ছে। আর বিরোধী দল বলে, দেশে বেকারত্ব বাড়ছে আর বাড়ছে। দরিদ্রতাও বাড়ছে চরমভাবে। অথচ প্রকৃত তথ্য কারো কাছেই নেই। 

সরকার পরিচালনার দায়িত্ব বা ক্ষমতার পালাবদল গণতান্ত্রিক নিয়মেই হবে- এমনটিই ¯^াভাবিক। তাহলে বাংলাদেশেও যথা সময়ে নির্বাচন হবে, এমন আশা নাগরিক মাত্রই করবেন। নির্বাচন নিয়ে হানাহানি আর অর্থনীতি ধ্বংস করে এমন আত্মঘাতি কর্মসূচিও কাম্য হতে পারে না। কিন্তুু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তা শুভ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না। এখানে সরকার কিংবা বিরোধীদল কেউই প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসাবে কাজ বা কর্মসংস্থানকে ¯^ীকৃতি দেয়নি, দিচ্ছে না। উভয়দলই জানে না এখানে মাসে কত লোক কর্মহীন হয়ে পড়ছে। কিংবা কত লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বরং যেসব বিধ্বংসী কার্যকলাপ চলছে তা ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্থবির করে দিয়ে আরো বেশি লোককে কর্মহীন করে দেয়ার উপলক্ষ তৈরি করছে। এতে কি লাভ হচ্ছে বুঝি না। তবে অর্থনীতির চাকা ¯^গতিতে না এগুলে দেশ যারাই পরিচালনা করুন না কেন, বেগ পেতে হবে। এরপরও উভয় দল কেন সমঝোতার রাজনীতি করেন না তার কারণ জানা নেই। কারণ হতে পারে একটাই, জনগণইতো সকল ক্ষমতার উৎস (!)। তাদের ক্ষমতায়নের আর কিইবা আছে। নিজেদের যোগ্যতায় তারা খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারবে। নইলে না খেয়ে মরবে। তাতে কারো কিছু যায় আসে না। 

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক 

(ইত্তেফাক, ২০ মার্চ ১৩ তারিখে প্রকাশিত)




||জামাল উদ্দীন||


পেছনে নীল সাগরের হাতছানি। ক্লান্ত রজনীতে মাঝে মধ্যেই হিমেল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রস্নাত বায়ু প্রবাহ। সমুদ্রকে পেছনে ফেলেই আমরা বসেছি, দেখছি আর ভাবছি শহরের ইতিকথা। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। সামনে নানান রঙিন বাতি সুদৃশ্য হোটেলের অস্তিত্ত¡ জানান দিচ্ছে। বহুতল হোটেল আর রিসোর্টের মধ্যেও মাঝারি মানের কিছু হোটেল রয়েছে। সবগুলোর কাউন্টারেই লোক আসছে আর যাচেছ। সবার হাতই কারো হাতে ধরা। লাস্যময়ী বালিকার উঁচু হিল আর কোমর দুলিয়ে হাটি হাটি করার এই দৃশ্য দেখে যে কারোই মনে হতে পারে সমুদ্রের সঙ্গীতময় ঢেউ যেন পাড়ে এসে আছড়ে পড়ছে। সেই দৃশ্য রাতকে করে তুলছে আরো বেশি রূপবতী।
মেয়েরা হাটছে। পুরুষরাও, কেউ বা সমুদ্রের দিকে মুখ করে নিসর্গে বিলিন হতে চাইছে। কেউ বা পানীয় গিলছে, আর তাদের হাতে ধরা বালিকা কখনো কখনো অর্ধচন্দ্র হয়েই ধরা দিচ্ছে। বাকি অর্ধেক চাঁদ ঐ আকাশে। পারলে তাও যেন হাতে নিয়ে আসে। এ যেন সত্যি হার মানিয়েছে সে কথাকে- ‘‘বড়’র পীরিতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে ধরি ক্ষণিকের চাঁদ।’’
পাতাইয়া বিচের এই প্রথম রাতটি যেন ঘুমের ঘোরে এক স্বপ্ন। স্বপ্নেই মানুষ অনেক কিছু দেখতে পায়, করতে পারে। তাই পুরোপুরি বিশ্বাসী হয়ে উঠতে কিছু সময় কেটে যায় আমার। মনে পড়ে যায় পেছনে ফেলে আসা বঙ্গোপসাগরের কথা। অপরূপ প্রকৃতি, পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা মাতৃভ‚মির কথা। বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই আমরা উড়ে এসেছিলাম এই দেশে। যেখানে এখন প্রচুর বাঙালি যায় ঘুরতে, কেউ বা চিকিৎসার্থে।
ঢাকায় বিমানবন্দরে বোডিং ব্রিজের লম্বা লাইন দেখেই বুঝেছি প্রচুর লোক আসে এখানে চিকিৎসার জন্য। হয়তো সস্তা, নিশ্চয়ই সুবিধা আছে বলেই। অনেকেই আসেন বিনোদনে, ভ্রমণ যাদের পেশা। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের ভ্রমণপিয়াসু মানুষগুলোর অন্যতম প্রধান গন্তব্য এই দেশ, ৯৫ ভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আর ৩ ভাগ মুসলমানের দেশ থাইল্যান্ড। প্লেনে উঠতেই দেখি এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হককে। যিনি যাচ্ছেন মাত্র দু’দিনের জন্য। ফাইনাল চেকিংয়ের সময়ই ওনার ফোনটা বেজে উঠলো। শেষ করে জানালেন সিরাজুল আলম খান। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা ক’জন কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছি শুনে বললেন, এতদিনে দেশে কত কিছু ঘটে যেতে পারে। বললাম, একটু অবসরতো চাই।
একই প্লেনে ব্যাংকক যাচ্ছেন নাঈমুল ইসলাম খান। জানালেন তিনি আমাদের নতুন সময় নামে একটি দৈনিক প্রকাশের অনুমতি নিয়েছেন। তাকে দেখে আমাদের দলের দু’একজনের অস্বস্তিও টের পেলাম। এদের দাবি নাঈম ভাই ‘কমদরি’ সাংবাদিক সৃষ্টি করে পেশার মান খুইয়ে দিয়েছেন। তিনি তার পরিকল্পনার কথা বললেন। কথায় কথায় বললেন, এতজন সাংবাদিক বিদেশে যাচ্ছে এটিতো নিউজ হওয়ার মত।
আমরা যাচ্ছি ঘুরতে, কাজের ফাঁকে সামান্য অবসরের মতই। মে দিবসের ছুটিকে মধ্যে রেখে একদিন আগে-পরে। তিন মে ফিরতি ফ্লাইটে ঢাকায়।
 জাকারিয়া কাজল ভাই উঠে গেলেন সিগারেট কিনতে, ডিউটি ফ্রি শপে। সঙ্গে হিরো (আবু কাওসার), আমিও ভাবলাম হেটে আসি।
সময় হলো উড়োজাহাজে ওঠার। বোর্ডিং ব্রিজ পার হয়ে নিজের সিটটি খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না। আসপাশেই আছে অন্যরা। সফরসঙ্গীদের তালিকায় আছে রেজাউল করীম, রাজীব আহমেদ, সাজ্জাদ আলম খান তপু। থাই এয়ারের ইকনোমি ক্লাসে বসে বাসায় ফোন দিয়ে জানান দিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা উড়ছি। আসলে তখন বিমান বালিকাদের সিটবেল্ট পরা তদারকি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তুু ব্যতিক্রমী এই বিমানবালাদের মুখে কৃত্রিম হাসি না দেখে অপরাপর বিমানসংস্থার সেই মেয়েগুলোর কথা মনে হয়ে গেল। দাঁত বের করা হাসি, কখনো কখনো বিচ্ছিরি মনে হয় আমার কাছে। বিনা প্রয়োজনে হাসির এই ব্যাকরণ আমার কাছে মেলে না।
এখানে, পাতাইয়া বিচ্ এ দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলোও সবাই হাসছে না। কারো কারো হাসি আবার বেশ আন্তরিক। মনে হতে পারে দীর্ঘচেনা। তারপর আলাপ জুড়ে দেয়া যায়। কিন্তুু আলাপের সময় তাদের নেই। সময়গুণে চলতে হয়। কাওসার একটু এগিয়ে এক ললনার কাছে জানতে চাইলো, সারারাত কি তারা এখানে থাকে?
ভাবলাম, বিরক্ত হবে। কিন্তুু না, বললো- সারারাত এখানে লোকজন থাকে। কেউ সমুদ্র পাড়ে বসে থাকে। হলিডে কাটানোর জন্যইতো এখানে সবাই আসে।
হিরোকে বললাম, একটু হাটি।
দুজনে হাটতে থাকি যতটুকু পথ আছে। বসতে হলেও বসার জায়গা আছে। তবে চেয়ারে সাগরমুখী হয়ে বসলে কড়ি ফেলতে হবে। ওখানে রাখা চেয়ারগুলো ভাড়ায় দেয়া হয়। হাটাহাটির পর দেখি রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। চারটা বেজে গেছে। হোটেলের দিকে পা বাড়াই। সকালে উঠে সাঁতার কাটতে হবে।
রুমে এসে টায়ার্ড লাগলো। ভাবলাম, একটু শাওয়ার নিই। না, বাথটাবে একটুখানি গরম জলে কিছু সময় শরীরটাকে  ছেড়ে দেয়াই ভাল হবে। তাই করলাম। গত সন্ধ্যায় যখন সিয়াম বে ভিউ হোটেলে উঠলাম, তখন কোনমতে শাওয়ার নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। রাতের খাবার খেতে হবে। সবাই সাড়ে ৯টায় লবীতে থাকবে। গ্রæপে ভ্রমণ করতে এলে সময় মেনে চলা খুবই জরুরী।
যদিও হোটেলে চেক-ইনের সময় কফি ও সামান্য স্ন্যাক্স জুটেছিল। কাজল ভাই চেয়েছিলেন, ব্যাংকক সুবর্ণভ‚মি এয়ারপোর্ট থেকে পাতাইয়া আসার পথে কোথাও একটু চা-পানির বিরতি থাকবে। কিন্তুু গাড়ির ড্রাইভারকে তা বোঝানো গেল না। ওকে থামতে বলা হলেও সে থামেনি। কিংবা আমাদের দরকার বুঝতে পারেনি। যদিও তার উত্তর ছিল: দেরি করা যাবে না। আমাকে দ্রুত ফিরতে হবে।
অবশ্য, আমাদেরও খারাপ লাগছিল না ব্যাংকক টু পাতাইয়া হাইওয়ে দেখে। দ্রুতগতিতে সবগাড়ি চলছে। বিকেলটাও যেন শান্ত সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও কম নয়। হিরো বললো- টাকা- চট্টগ্রাম হাইওয়ের মত রাস্তার ওপর বাজার নেই এখানে। মানুষদেরও অবাধ চলাচল নেই। বিশ্বরোডে গরু চরা, তা শুধু বাংলাদেশেই মানায়; পেছন থেকে কে একজন বলে বসল কথাটা। থাইল্যান্ডের অর্থনীতি নিয়েও এক দফা সরব আলোচনা হল। এখানকার পর্যটনের আয়ের বাইরেও এখন সামুদ্রিক মৎস্য রফতানি করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। পর্যটন প্রসঙ্গে ভ্রমণসঙ্গীদের সবার ধারণা, বিমানবন্দরে কোন ঝুটঝামেলা নেই। মুহূর্তেই ইমিগ্রেশনের কার্যাদি সম্পন্ন হয়ে গেছে। পর্যটকরাতো এমনটিই চায়।
কাজল ভাই বললেন, আমাদের কক্সবাজার সৈকত এত দীর্ঘ, অথচ আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না। কথায় কথায় অনেক দূর চলে এসেছি। কিন্তুু আমার সেটে সিমকার্ডটি ঢুকাতে পারছি না। চেষ্টা করে কয়েক মিনিট লেগে গেল। তারপর ফোন দিলাম বাসায়। জানালাম, ঠিকমত এসে পৌঁছেছি।
সাড়ে ন’টার আগেই ফোন পেলাম। কাজল ভাই নিচে, বললাম- আসছি।
খাবার খাব কোথায়? এখানে এসেও দু’একজন বাঙালি হোটেলের কথা জিজ্ঞেস করলো। বললাম, এখানকার ট্রেডিশনাল ফুডের টেস্ট নেয়া দরকার।
ফয়েজ আলি বলল, সেটা হবে। আজ কোন ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে খাই।
হোটেল থেকে বেরিয়ে হাটতে হাটতে পেয়ে গেলাম এক রেষ্টুরেন্ট। সেখানে রাতের খাবার শেষ করে কেউ কেউ হোটেলে ফিরে গেল। হিরো বললো- একটু হাটি।
আমিও যোগ করলাম, বাইরে বেড়াতে এলে হাটাহাটি করাই ভাল। না হলে ভাল করে দেখা যায় না। সচরাচর আমি তাই করি। হাটতে হাটতে রাস্তার দুপাশে থাকা ম্যাসাজ সেন্টারগুলো সহজেই চোখে পড়ে। ম্যাসাজ, ম্যাসাজ বলে মেয়েরা জানতে চায় আমরা ম্যাসাজ করাবো কি না।
ওদের কথার উত্তর না দিয়ে আগন্তুুকের মতই আমরা তাকিয়ে দেখি আর হাটি। রাতের পাতাইয়া শহরের কিছুটা দৃশ্য অবলোকন করার প্রত্যয় আমাদের দু’জনের।

দুই.
রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে পড়ে গেল টমেটো ক্ষেতের কথা। এখানকার ছেলেমেয়েদের দেখার পর টমেটো ক্ষেত কেন, প্রশ্ন করতে পারেন যে কেউ। জেনেছি কৃষির উচ্চ ফলনের জন্য হাইব্রিড বীজের ব্যবহার ছিল দেশটিতে। শুধু তাই নয়, খামারে গেলে দেখা যেত পরাগায়নের কাজটি করতো প্রশিক্ষিত মেয়েরা। টমেটো গাছের পুরুষ ফুলকে স্ত্রী ফুলের সাথে মিলিয়ে দিত তারা। যাতে পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। আমরা পড়েছি মৌমাছি, প্রজাপতি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন হয়। কিন্তুু এখানে হাতে কাজটি করা হচ্ছে। দেশটির রাস্তাঘাট, সমুদ্রপাড় কিংবা হোটেল-রিসোর্টগুলোও যেন পুরুষ আর মেয়ে সঙ্গীকে মিলিয়ে দিচ্ছে। তাবৎ বিশ্ব থেকে অনেকেই আসছে আর উপভোগ করছে থাইল্যান্ডের প্রকৃতিরাজি আর নৈসর্গিক রজনী। সবই তাদের আয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
পরাগায়নের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে থাইল্যান্ডের অর্থনীতি নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় বাংলাদেশের সঙ্গে এর যথেষ্ট মিল রয়েছে। উভয় দেশের অর্থনীতির ভিত্তিই ছিল কৃষি। কিন্তুু বাংলাদেশের মতই তারা কৃষির ন্যায্যমূল্য পেত না। যে কারণে কৃষির প্রতি তাদের আগ্রহ ক্রমাš^য়ে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকারী ভাবে কৃষির গুরুত্ব এতই বেড়ে যায় যে, সেচের পানি অপচয় রোধে মাইলের পর মাইল পাকা নালা করা হয়েছে। ১০-১৫ মাইল দূরে পানির উৎস। সেই উৎস থেকে সাধারণ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কৃষকের মাঠে চলে যাচ্ছে পানি। মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করে পানির সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাদের সেচদক্ষতা প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৩০ শতাংশ পানি অপচয় হয়। এ তথ্যও আজ থেকে বেশ ক’বছর আগের।
বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ আয়তন দেশটির। জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতির গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া দেশটি প্রযুক্তিতেও অনেক দূর এগিয়েছে। ক্রমেই এখানে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। উৎপাদন ও রপ্তানি খাত পরিণত হয়েছে অর্থনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রকে। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংস্থাটির বিভিন্নমুখী সুবিধাদি আদায় নিশ্চিতকরণে নিজেদের কারিগরি ও আলোচনা-সামর্থ্য বাড়িয়েছে। তখন থেকেই থাইল্যান্ড নিজেই কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে আসছে। থাই বাণিজ্যমন্ত্রী ড. সুপাচাই পানিচপাকদি ২০০২ সালে তিন বছরের জন্য ডব্লিউটিও’র প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হয়েছিলেন। যা দেশটির ভাবমূর্তি বাড়াতে ইতিবাচক হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে আশিয়ানের অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি থাইল্যান্ড। ৬১ কোটি মানুষের আশিয়ান অঞ্চলে ২০১৫ সালে ইকোনোমিক কমিউনিটি গঠন করার কথা রয়েছে। তখন জোটভুক্ত দশটি দেশে একক বাজার ও উৎপাদন-ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এ অর্থনৈতিক শক্তির প্রভাব কি হতে পারে তা সহজেই আঁচ করা যায়। তাই হিরোকে বললাম, পর্যটননির্ভর অর্থনীতি দেখে হাসাহাসি করে লাভ নেই। ওরা দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে।
কথার সূত্র ধরে হিরো আলাপ শুরু করে দিল এক থাই তরুণীর সঙ্গে। মাস্টার্স পাস ঐ তরুণীর কথায়ও আমার কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেল সে। তরুণীটি জানতে চাইলো তোমরা কোন দেশ থেকে এসেছো।
উত্তর- বাংলাদেশ।
হিরোর কণ্ঠ যেন দমে এল। আমি ভাবলাম, থাইল্যান্ড আমাদের সঙ্গে বিমসটেকের সদস্য। বাংলাদেশ, ভারতসহ বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সাতটি দেশ নিয়ে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তবে কি বাংলাদেশ কেবলি পিছিয়ে পড়ছে! প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিমসটেক কেবল অগ্রাধিকার খাত ৬টি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি চিহ্নিত করেছে। বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বলা আবশ্যক যে, থাইল্যান্ড অন্য যেসব জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোও কার্যকর আছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা আদায়েও দেশটি সক্ষম হয়েছে। যেমন, দেশটির সঙ্গে রয়েছে তিনটি আঞ্চলিক নদীর সংযোগ। এই তিনটি আঞ্চলিক নদী, ইরাওয়াদ্দী-চাও ফ্রায়া-মেকং কে ঘিরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা কৌশল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২০০৩ সালে । কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম মিলে এ সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দেশগুলো বহুমুখী সামর্থ্য ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। এই জোটের প্রধান লক্ষ্য উপ-অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী আকারের দিক থেকে থাইল্যান্ড বিশ্বের ৩২তম অর্থনীতি। বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম।
বাংলাদেশ থাইল্যান্ডে যেসব পণ্য রফতানি করে তারমধ্যে রয়েছে তৈরী পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য প্রভৃতি। আমদানি করা হয় খাদ্যপণ্য চাল, সুতা, সালফার, প্লাস্টিক, কাপড়, স্টোন, প্লাস্টারিং সামগ্রী, রাবার, চুন, কাগজ প্রভৃতি। থাইল্যান্ডকে নিয়ে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে পারলে আশিয়ান বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশেরও সুযোগ তৈরি হতো। যদিও দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে বৈঠক হয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী ইনলাক সিনাওয়াত্রা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। ঐ সফর শেষে ৩১ দফা যৌথ ঘোষণা নেয়া হয়। ঘোষণায় ২০১৬ সালে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকর্ষণীয় প্রণোদনা ও উদার বিনিয়োগ-নীতির সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের অবকাঠামো, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতের বিনিয়োগের আহবন জানান। (অসমাপ্ত)



করোনা ও মন্দার ২০২০: এশিয়ার পুনরুত্থানে সংশয়


||জামাল উদ্দীন||
এশিয়ার অর্থনীতির জন্য ২০২০ বছরটি আশাব্যাঞ্জক ছিল। কিন্তু করোনা ও বিশ্বজুড়ে মন্দার প্রভাবে এশিয়ার অর্থনীতি এবছর ঠিক আগের মত এগুতে পারবে না বলেই মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তাদের সংশয়, বছর শেষে এশিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আশা অতি ক্ষীণ। এজন্যে যেসব যৌক্তিক কারণের কথা বলা হচ্ছে তারমধ্যে রয়েছেÑ করোনার প্রভাব, জ্বালানি তেলের মূল্য ঝাঁকুনি, মন্দার প্রভাব কাটাতে কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ব্যংকগুলোর দক্ষতার অভাব।
বলা হত,  ‘নেক্সট ইজ এশিয়া’ কিংবা ‘এশিয়ার দশক’ বলে যে মিথ চালু হয়ে গিয়েছিল তা টিকে থাকার লক্ষণ আপাতত স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রÑচীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে কেটেছে গত একটি বছর। সে সমস্যার কিছুটা লাঘব হতে চললেও চলতি বছরের শুরুতে করোনার অভিঘাত শুধু এশিয়ার বড় অর্থনীতিগুলোকেই নয়, বরং উঠতি দেশগুলোকেও চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার করার গ্রাস অপেক্ষমান থাকার মধ্যেই করোনা এশিয়ার বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ২০০৮ সালের পর শেয়ারবাজারে বড় পতন ঘটেছে করোনার প্রভাবে। বেইজিং, সাউথ কোরিয়া, টোকিও, ইতালি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনা ‘পতন্মুখ’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ঠিক মানুষের জীবনযাত্রায়, বাণিজ্যেও। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের তেলযুদ্ধও বিশ্ববাণিজ্যকে ঘায়েল করেছে।
এশিয়ার বড় অর্থনীতি চীন গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধির ঘরে নেমেছে। একই ভাবে জাপানের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটন খাতে সঙ্গতকারণেই আয় কমেছে। মালয়েশিয়াতে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিরতা সবমিলিয়ে এশিয়ার দেশগুলো ২০২০ সাল খুব একটা সুখকর হচ্ছে না। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়েও বলেছেন, ২০২০ হতে পারে ২০০৮ এর চেয়েও ভয়াবহতম খারাপ বছর। সে বছর ‘লেহম্যান ব্রাদার্সে’র ঘটনার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত সুদের হার কমিয়ে আনাসহ ত্বরিত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রসঙ্গত, লেহম্যান ব্রাদার্স যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়কার নামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসাবে খ্যাতি কুড়িয়েছিল। ব্যাংকটি এক পর্যায়ে দেউলিয়া ঘোষিত হয়। ৬০ হাজার কোটি ডলার ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকার চতুর্থ বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ঘোষণা করে ঐ ধার আর শোধ করতে পারবে না তারা। যা বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দেয়।
তবে সে সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও করোনার কারণে এখনো সে ধরণের কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বরং পর্যটন শিল্পে ধস, এভিয়েশন বাণিজ্যে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বিঘœ ঘটায় সার্বিক অর্থনীতিতেই অস্থিরতা চলমান। সে তুলনায় ধনী দেশ যেমন আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য সুদের হার কমানোসহ নানা প্রণোদনার কৌশল গ্রহণ করলেও এশিয়ার অনেক দেশ এখনো পিছিয়ে। বাংলাদেশও তন্মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ করোনা আক্রান্ত হলেও এখনো অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কার্যত: তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী হলেও বাংলাদেশে এখনো ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। রফতানি খাত ধাক্কা খেলেও বিকল্প ব্যবস্থা এখনো নেয়ার উদ্যোগ নেই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ইত্তেফাককে বলেন, যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে বাংলাদেশের উচিত দ্রুতই কর্মকৌশল প্রণয়ন করা। সুদের হার কমিয়ে আনা। ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, সুদের হার কমিয়ে না আনলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, শুধু সুদ হার কমালেই হবে না, সরল সুদ প্রথা চালু করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ সুরক্ষা তথা আস্থা বাড়বে না। তাতে কর্মসংস্থান হবে না। আবার ব্যবসা-বাণিজ্য না চললে রাজ¯^ আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সর্ববৃহৎ রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত নীতিসহায়তা দাবি করেন।

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget