ডাকে ঐ আয়রে... নীল সাগরের হাতছানি
||জামাল উদ্দীন||
পেছনে নীল সাগরের হাতছানি। ক্লান্ত রজনীতে মাঝে মধ্যেই হিমেল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে সমুদ্রস্নাত বায়ু প্রবাহ। সমুদ্রকে পেছনে ফেলেই আমরা বসেছি, দেখছি আর ভাবছি শহরের ইতিকথা। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। সামনে নানান রঙিন বাতি সুদৃশ্য হোটেলের অস্তিত্ত¡ জানান দিচ্ছে। বহুতল হোটেল আর রিসোর্টের মধ্যেও মাঝারি মানের কিছু হোটেল রয়েছে। সবগুলোর কাউন্টারেই লোক আসছে আর যাচেছ। সবার হাতই কারো হাতে ধরা। লাস্যময়ী বালিকার উঁচু হিল আর কোমর দুলিয়ে হাটি হাটি করার এই দৃশ্য দেখে যে কারোই মনে হতে পারে সমুদ্রের সঙ্গীতময় ঢেউ যেন পাড়ে এসে আছড়ে পড়ছে। সেই দৃশ্য রাতকে করে তুলছে আরো বেশি রূপবতী।
মেয়েরা হাটছে। পুরুষরাও, কেউ বা সমুদ্রের দিকে মুখ করে নিসর্গে বিলিন হতে চাইছে। কেউ বা পানীয় গিলছে, আর তাদের হাতে ধরা বালিকা কখনো কখনো অর্ধচন্দ্র হয়েই ধরা দিচ্ছে। বাকি অর্ধেক চাঁদ ঐ আকাশে। পারলে তাও যেন হাতে নিয়ে আসে। এ যেন সত্যি হার মানিয়েছে সে কথাকে- ‘‘বড়’র পীরিতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে ধরি ক্ষণিকের চাঁদ।’’
পাতাইয়া বিচের এই প্রথম রাতটি যেন ঘুমের ঘোরে এক স্বপ্ন। স্বপ্নেই মানুষ অনেক কিছু দেখতে পায়, করতে পারে। তাই পুরোপুরি বিশ্বাসী হয়ে উঠতে কিছু সময় কেটে যায় আমার। মনে পড়ে যায় পেছনে ফেলে আসা বঙ্গোপসাগরের কথা। অপরূপ প্রকৃতি, পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা মাতৃভ‚মির কথা। বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই আমরা উড়ে এসেছিলাম এই দেশে। যেখানে এখন প্রচুর বাঙালি যায় ঘুরতে, কেউ বা চিকিৎসার্থে।
ঢাকায় বিমানবন্দরে বোডিং ব্রিজের লম্বা লাইন দেখেই বুঝেছি প্রচুর লোক আসে এখানে চিকিৎসার জন্য। হয়তো সস্তা, নিশ্চয়ই সুবিধা আছে বলেই। অনেকেই আসেন বিনোদনে, ভ্রমণ যাদের পেশা। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের ভ্রমণপিয়াসু মানুষগুলোর অন্যতম প্রধান গন্তব্য এই দেশ, ৯৫ ভাগ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আর ৩ ভাগ মুসলমানের দেশ থাইল্যান্ড। প্লেনে উঠতেই দেখি এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হককে। যিনি যাচ্ছেন মাত্র দু’দিনের জন্য। ফাইনাল চেকিংয়ের সময়ই ওনার ফোনটা বেজে উঠলো। শেষ করে জানালেন সিরাজুল আলম খান। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা ক’জন কয়েকদিনের জন্য যাচ্ছি শুনে বললেন, এতদিনে দেশে কত কিছু ঘটে যেতে পারে। বললাম, একটু অবসরতো চাই।
একই প্লেনে ব্যাংকক যাচ্ছেন নাঈমুল ইসলাম খান। জানালেন তিনি আমাদের নতুন সময় নামে একটি দৈনিক প্রকাশের অনুমতি নিয়েছেন। তাকে দেখে আমাদের দলের দু’একজনের অস্বস্তিও টের পেলাম। এদের দাবি নাঈম ভাই ‘কমদরি’ সাংবাদিক সৃষ্টি করে পেশার মান খুইয়ে দিয়েছেন। তিনি তার পরিকল্পনার কথা বললেন। কথায় কথায় বললেন, এতজন সাংবাদিক বিদেশে যাচ্ছে এটিতো নিউজ হওয়ার মত।
আমরা যাচ্ছি ঘুরতে, কাজের ফাঁকে সামান্য অবসরের মতই। মে দিবসের ছুটিকে মধ্যে রেখে একদিন আগে-পরে। তিন মে ফিরতি ফ্লাইটে ঢাকায়।
জাকারিয়া কাজল ভাই উঠে গেলেন সিগারেট কিনতে, ডিউটি ফ্রি শপে। সঙ্গে হিরো (আবু কাওসার), আমিও ভাবলাম হেটে আসি।
সময় হলো উড়োজাহাজে ওঠার। বোর্ডিং ব্রিজ পার হয়ে নিজের সিটটি খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না। আসপাশেই আছে অন্যরা। সফরসঙ্গীদের তালিকায় আছে রেজাউল করীম, রাজীব আহমেদ, সাজ্জাদ আলম খান তপু। থাই এয়ারের ইকনোমি ক্লাসে বসে বাসায় ফোন দিয়ে জানান দিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা উড়ছি। আসলে তখন বিমান বালিকাদের সিটবেল্ট পরা তদারকি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তুু ব্যতিক্রমী এই বিমানবালাদের মুখে কৃত্রিম হাসি না দেখে অপরাপর বিমানসংস্থার সেই মেয়েগুলোর কথা মনে হয়ে গেল। দাঁত বের করা হাসি, কখনো কখনো বিচ্ছিরি মনে হয় আমার কাছে। বিনা প্রয়োজনে হাসির এই ব্যাকরণ আমার কাছে মেলে না।
এখানে, পাতাইয়া বিচ্ এ দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলোও সবাই হাসছে না। কারো কারো হাসি আবার বেশ আন্তরিক। মনে হতে পারে দীর্ঘচেনা। তারপর আলাপ জুড়ে দেয়া যায়। কিন্তুু আলাপের সময় তাদের নেই। সময়গুণে চলতে হয়। কাওসার একটু এগিয়ে এক ললনার কাছে জানতে চাইলো, সারারাত কি তারা এখানে থাকে?
ভাবলাম, বিরক্ত হবে। কিন্তুু না, বললো- সারারাত এখানে লোকজন থাকে। কেউ সমুদ্র পাড়ে বসে থাকে। হলিডে কাটানোর জন্যইতো এখানে সবাই আসে।
হিরোকে বললাম, একটু হাটি।
দুজনে হাটতে থাকি যতটুকু পথ আছে। বসতে হলেও বসার জায়গা আছে। তবে চেয়ারে সাগরমুখী হয়ে বসলে কড়ি ফেলতে হবে। ওখানে রাখা চেয়ারগুলো ভাড়ায় দেয়া হয়। হাটাহাটির পর দেখি রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। চারটা বেজে গেছে। হোটেলের দিকে পা বাড়াই। সকালে উঠে সাঁতার কাটতে হবে।
রুমে এসে টায়ার্ড লাগলো। ভাবলাম, একটু শাওয়ার নিই। না, বাথটাবে একটুখানি গরম জলে কিছু সময় শরীরটাকে ছেড়ে দেয়াই ভাল হবে। তাই করলাম। গত সন্ধ্যায় যখন সিয়াম বে ভিউ হোটেলে উঠলাম, তখন কোনমতে শাওয়ার নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। রাতের খাবার খেতে হবে। সবাই সাড়ে ৯টায় লবীতে থাকবে। গ্রæপে ভ্রমণ করতে এলে সময় মেনে চলা খুবই জরুরী।
যদিও হোটেলে চেক-ইনের সময় কফি ও সামান্য স্ন্যাক্স জুটেছিল। কাজল ভাই চেয়েছিলেন, ব্যাংকক সুবর্ণভ‚মি এয়ারপোর্ট থেকে পাতাইয়া আসার পথে কোথাও একটু চা-পানির বিরতি থাকবে। কিন্তুু গাড়ির ড্রাইভারকে তা বোঝানো গেল না। ওকে থামতে বলা হলেও সে থামেনি। কিংবা আমাদের দরকার বুঝতে পারেনি। যদিও তার উত্তর ছিল: দেরি করা যাবে না। আমাকে দ্রুত ফিরতে হবে।
অবশ্য, আমাদেরও খারাপ লাগছিল না ব্যাংকক টু পাতাইয়া হাইওয়ে দেখে। দ্রুতগতিতে সবগাড়ি চলছে। বিকেলটাও যেন শান্ত সুন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও কম নয়। হিরো বললো- টাকা- চট্টগ্রাম হাইওয়ের মত রাস্তার ওপর বাজার নেই এখানে। মানুষদেরও অবাধ চলাচল নেই। বিশ্বরোডে গরু চরা, তা শুধু বাংলাদেশেই মানায়; পেছন থেকে কে একজন বলে বসল কথাটা। থাইল্যান্ডের অর্থনীতি নিয়েও এক দফা সরব আলোচনা হল। এখানকার পর্যটনের আয়ের বাইরেও এখন সামুদ্রিক মৎস্য রফতানি করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। পর্যটন প্রসঙ্গে ভ্রমণসঙ্গীদের সবার ধারণা, বিমানবন্দরে কোন ঝুটঝামেলা নেই। মুহূর্তেই ইমিগ্রেশনের কার্যাদি সম্পন্ন হয়ে গেছে। পর্যটকরাতো এমনটিই চায়।
কাজল ভাই বললেন, আমাদের কক্সবাজার সৈকত এত দীর্ঘ, অথচ আমরা কাজে লাগাতে পারলাম না। কথায় কথায় অনেক দূর চলে এসেছি। কিন্তুু আমার সেটে সিমকার্ডটি ঢুকাতে পারছি না। চেষ্টা করে কয়েক মিনিট লেগে গেল। তারপর ফোন দিলাম বাসায়। জানালাম, ঠিকমত এসে পৌঁছেছি।
সাড়ে ন’টার আগেই ফোন পেলাম। কাজল ভাই নিচে, বললাম- আসছি।
খাবার খাব কোথায়? এখানে এসেও দু’একজন বাঙালি হোটেলের কথা জিজ্ঞেস করলো। বললাম, এখানকার ট্রেডিশনাল ফুডের টেস্ট নেয়া দরকার।
ফয়েজ আলি বলল, সেটা হবে। আজ কোন ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে খাই।
হোটেল থেকে বেরিয়ে হাটতে হাটতে পেয়ে গেলাম এক রেষ্টুরেন্ট। সেখানে রাতের খাবার শেষ করে কেউ কেউ হোটেলে ফিরে গেল। হিরো বললো- একটু হাটি।
আমিও যোগ করলাম, বাইরে বেড়াতে এলে হাটাহাটি করাই ভাল। না হলে ভাল করে দেখা যায় না। সচরাচর আমি তাই করি। হাটতে হাটতে রাস্তার দুপাশে থাকা ম্যাসাজ সেন্টারগুলো সহজেই চোখে পড়ে। ম্যাসাজ, ম্যাসাজ বলে মেয়েরা জানতে চায় আমরা ম্যাসাজ করাবো কি না।
ওদের কথার উত্তর না দিয়ে আগন্তুুকের মতই আমরা তাকিয়ে দেখি আর হাটি। রাতের পাতাইয়া শহরের কিছুটা দৃশ্য অবলোকন করার প্রত্যয় আমাদের দু’জনের।
দুই.
রাস্তায় হাটতে হাটতে মনে পড়ে গেল টমেটো ক্ষেতের কথা। এখানকার ছেলেমেয়েদের দেখার পর টমেটো ক্ষেত কেন, প্রশ্ন করতে পারেন যে কেউ। জেনেছি কৃষির উচ্চ ফলনের জন্য হাইব্রিড বীজের ব্যবহার ছিল দেশটিতে। শুধু তাই নয়, খামারে গেলে দেখা যেত পরাগায়নের কাজটি করতো প্রশিক্ষিত মেয়েরা। টমেটো গাছের পুরুষ ফুলকে স্ত্রী ফুলের সাথে মিলিয়ে দিত তারা। যাতে পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। আমরা পড়েছি মৌমাছি, প্রজাপতি কিংবা বাতাসের মাধ্যমে পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন হয়। কিন্তুু এখানে হাতে কাজটি করা হচ্ছে। দেশটির রাস্তাঘাট, সমুদ্রপাড় কিংবা হোটেল-রিসোর্টগুলোও যেন পুরুষ আর মেয়ে সঙ্গীকে মিলিয়ে দিচ্ছে। তাবৎ বিশ্ব থেকে অনেকেই আসছে আর উপভোগ করছে থাইল্যান্ডের প্রকৃতিরাজি আর নৈসর্গিক রজনী। সবই তাদের আয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
পরাগায়নের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে থাইল্যান্ডের অর্থনীতি নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় বাংলাদেশের সঙ্গে এর যথেষ্ট মিল রয়েছে। উভয় দেশের অর্থনীতির ভিত্তিই ছিল কৃষি। কিন্তুু বাংলাদেশের মতই তারা কৃষির ন্যায্যমূল্য পেত না। যে কারণে কৃষির প্রতি তাদের আগ্রহ ক্রমাš^য়ে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকারী ভাবে কৃষির গুরুত্ব এতই বেড়ে যায় যে, সেচের পানি অপচয় রোধে মাইলের পর মাইল পাকা নালা করা হয়েছে। ১০-১৫ মাইল দূরে পানির উৎস। সেই উৎস থেকে সাধারণ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কৃষকের মাঠে চলে যাচ্ছে পানি। মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করে পানির সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাদের সেচদক্ষতা প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৩০ শতাংশ পানি অপচয় হয়। এ তথ্যও আজ থেকে বেশ ক’বছর আগের।
বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ আয়তন দেশটির। জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতির গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া দেশটি প্রযুক্তিতেও অনেক দূর এগিয়েছে। ক্রমেই এখানে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। উৎপাদন ও রপ্তানি খাত পরিণত হয়েছে অর্থনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রকে। ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংস্থাটির বিভিন্নমুখী সুবিধাদি আদায় নিশ্চিতকরণে নিজেদের কারিগরি ও আলোচনা-সামর্থ্য বাড়িয়েছে। তখন থেকেই থাইল্যান্ড নিজেই কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে আসছে। থাই বাণিজ্যমন্ত্রী ড. সুপাচাই পানিচপাকদি ২০০২ সালে তিন বছরের জন্য ডব্লিউটিও’র প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হয়েছিলেন। যা দেশটির ভাবমূর্তি বাড়াতে ইতিবাচক হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে আশিয়ানের অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি থাইল্যান্ড। ৬১ কোটি মানুষের আশিয়ান অঞ্চলে ২০১৫ সালে ইকোনোমিক কমিউনিটি গঠন করার কথা রয়েছে। তখন জোটভুক্ত দশটি দেশে একক বাজার ও উৎপাদন-ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এ অর্থনৈতিক শক্তির প্রভাব কি হতে পারে তা সহজেই আঁচ করা যায়। তাই হিরোকে বললাম, পর্যটননির্ভর অর্থনীতি দেখে হাসাহাসি করে লাভ নেই। ওরা দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে।
কথার সূত্র ধরে হিরো আলাপ শুরু করে দিল এক থাই তরুণীর সঙ্গে। মাস্টার্স পাস ঐ তরুণীর কথায়ও আমার কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেল সে। তরুণীটি জানতে চাইলো তোমরা কোন দেশ থেকে এসেছো।
উত্তর- বাংলাদেশ।
হিরোর কণ্ঠ যেন দমে এল। আমি ভাবলাম, থাইল্যান্ড আমাদের সঙ্গে বিমসটেকের সদস্য। বাংলাদেশ, ভারতসহ বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সাতটি দেশ নিয়ে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। তবে কি বাংলাদেশ কেবলি পিছিয়ে পড়ছে! প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিমসটেক কেবল অগ্রাধিকার খাত ৬টি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি চিহ্নিত করেছে। বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বলা আবশ্যক যে, থাইল্যান্ড অন্য যেসব জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোও কার্যকর আছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা আদায়েও দেশটি সক্ষম হয়েছে। যেমন, দেশটির সঙ্গে রয়েছে তিনটি আঞ্চলিক নদীর সংযোগ। এই তিনটি আঞ্চলিক নদী, ইরাওয়াদ্দী-চাও ফ্রায়া-মেকং কে ঘিরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা কৌশল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২০০৩ সালে । কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম মিলে এ সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় দেশগুলো বহুমুখী সামর্থ্য ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। এই জোটের প্রধান লক্ষ্য উপ-অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী আকারের দিক থেকে থাইল্যান্ড বিশ্বের ৩২তম অর্থনীতি। বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম।
বাংলাদেশ থাইল্যান্ডে যেসব পণ্য রফতানি করে তারমধ্যে রয়েছে তৈরী পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য প্রভৃতি। আমদানি করা হয় খাদ্যপণ্য চাল, সুতা, সালফার, প্লাস্টিক, কাপড়, স্টোন, প্লাস্টারিং সামগ্রী, রাবার, চুন, কাগজ প্রভৃতি। থাইল্যান্ডকে নিয়ে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে পারলে আশিয়ান বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশেরও সুযোগ তৈরি হতো। যদিও দু’দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে বৈঠক হয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী ইনলাক সিনাওয়াত্রা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। ঐ সফর শেষে ৩১ দফা যৌথ ঘোষণা নেয়া হয়। ঘোষণায় ২০১৬ সালে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকর্ষণীয় প্রণোদনা ও উদার বিনিয়োগ-নীতির সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের অবকাঠামো, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতের বিনিয়োগের আহবন জানান। (অসমাপ্ত)
Post a Comment