||জামাল উদ্দীন||
এশিয়ার অর্থনীতির জন্য ২০২০ বছরটি আশাব্যাঞ্জক ছিল। কিন্তু করোনা ও বিশ্বজুড়ে মন্দার প্রভাবে এশিয়ার অর্থনীতি এবছর ঠিক আগের মত এগুতে পারবে না বলেই মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তাদের সংশয়, বছর শেষে এশিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আশা অতি ক্ষীণ। এজন্যে যেসব যৌক্তিক কারণের কথা বলা হচ্ছে তারমধ্যে রয়েছেÑ করোনার প্রভাব, জ্বালানি তেলের মূল্য ঝাঁকুনি, মন্দার প্রভাব কাটাতে কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ব্যংকগুলোর দক্ষতার অভাব।
বলা হত, ‘নেক্সট ইজ এশিয়া’ কিংবা ‘এশিয়ার দশক’ বলে যে মিথ চালু হয়ে গিয়েছিল তা টিকে থাকার লক্ষণ আপাতত স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রÑচীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে কেটেছে গত একটি বছর। সে সমস্যার কিছুটা লাঘব হতে চললেও চলতি বছরের শুরুতে করোনার অভিঘাত শুধু এশিয়ার বড় অর্থনীতিগুলোকেই নয়, বরং উঠতি দেশগুলোকেও চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার করার গ্রাস অপেক্ষমান থাকার মধ্যেই করোনা এশিয়ার বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ২০০৮ সালের পর শেয়ারবাজারে বড় পতন ঘটেছে করোনার প্রভাবে। বেইজিং, সাউথ কোরিয়া, টোকিও, ইতালি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনা ‘পতন্মুখ’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ঠিক মানুষের জীবনযাত্রায়, বাণিজ্যেও। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের তেলযুদ্ধও বিশ্ববাণিজ্যকে ঘায়েল করেছে।
এশিয়ার বড় অর্থনীতি চীন গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধির ঘরে নেমেছে। একই ভাবে জাপানের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটন খাতে সঙ্গতকারণেই আয় কমেছে। মালয়েশিয়াতে কিছুটা রাজনৈতিক অস্থিরতা সবমিলিয়ে এশিয়ার দেশগুলো ২০২০ সাল খুব একটা সুখকর হচ্ছে না। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়েও বলেছেন, ২০২০ হতে পারে ২০০৮ এর চেয়েও ভয়াবহতম খারাপ বছর। সে বছর ‘লেহম্যান ব্রাদার্সে’র ঘটনার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত সুদের হার কমিয়ে আনাসহ ত্বরিত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রসঙ্গত, লেহম্যান ব্রাদার্স যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়কার নামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসাবে খ্যাতি কুড়িয়েছিল। ব্যাংকটি এক পর্যায়ে দেউলিয়া ঘোষিত হয়। ৬০ হাজার কোটি ডলার ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকার চতুর্থ বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ঘোষণা করে ঐ ধার আর শোধ করতে পারবে না তারা। যা বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দেয়।
তবে সে সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও করোনার কারণে এখনো সে ধরণের কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বরং পর্যটন শিল্পে ধস, এভিয়েশন বাণিজ্যে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বিঘœ ঘটায় সার্বিক অর্থনীতিতেই অস্থিরতা চলমান। সে তুলনায় ধনী দেশ যেমন আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য সুদের হার কমানোসহ নানা প্রণোদনার কৌশল গ্রহণ করলেও এশিয়ার অনেক দেশ এখনো পিছিয়ে। বাংলাদেশও তন্মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ করোনা আক্রান্ত হলেও এখনো অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কার্যত: তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী হলেও বাংলাদেশে এখনো ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। রফতানি খাত ধাক্কা খেলেও বিকল্প ব্যবস্থা এখনো নেয়ার উদ্যোগ নেই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ইত্তেফাককে বলেন, যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে বাংলাদেশের উচিত দ্রুতই কর্মকৌশল প্রণয়ন করা। সুদের হার কমিয়ে আনা। ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, সুদের হার কমিয়ে না আনলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, শুধু সুদ হার কমালেই হবে না, সরল সুদ প্রথা চালু করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ সুরক্ষা তথা আস্থা বাড়বে না। তাতে কর্মসংস্থান হবে না। আবার ব্যবসা-বাণিজ্য না চললে রাজ¯^ আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সর্ববৃহৎ রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত নীতিসহায়তা দাবি করেন।

Post a Comment